বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস আজ (১৭ মে)। সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিমি পারদের কম ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মিমি পারদের কম হলো স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা। সিস্টোলিক যদি ১৪০ মিমি পারদ বা এর বেশি অথবা ডায়াস্টোলিক যদি ৯০ মিমি পারদ বা এর বেশি হয় কিংবা সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক—দুটিই যদি এই মাত্রার ওপরে থাকে, তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। এর মাঝামাঝি মাত্রায় রক্তচাপ পাওয়া গেলে তাকে প্রাক্-উচ্চ রক্তচাপ বলে।
দিবসটিকে ঘিরে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—
‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন।’
কীভাবে মাপবেন ?
রক্তচাপ মাপার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে চা, কফি পান বা ধূমপান করা যাবে না। কমপক্ষে পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নেওয়ার পর রক্তচাপ মাপতে হবে। পা দুটি মেঝেতে রেখে দুই হাত সামনের টেবিলে অথবা চেয়ারের হাতলে রেখে মাপতে হবে। রক্তচাপ মাপার যন্ত্রটির কাফ কনুইয়ের ভাঁজের এক ইঞ্চি ওপরে বাঁধতে হবে।
এখন অটোমেটেড বা স্বয়ংক্রিয় রক্তচাপ মাপার যন্ত্রও পাওয়া যায়।
রক্তচাপ বেড়ে গেলে কি করবেন
হঠাৎ রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে হৃদ্যন্ত্র, কিডনি, রক্তনালি, চোখ ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। রক্তচাপ ১৮০/১২০ মিমি পারদের ওপরে উঠলে এ রকম আশঙ্কা তৈরি হয়। এ সময় দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, বুকে ব্যথা বা চাপ, শ্বাসকষ্ট, লালচে প্রস্রাব, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাথাব্যথা, শরীরের অংশবিশেষ বা একাংশের দুর্বলতা কিংবা অবশ হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
রক্তচাপ কমে গেলে কি করবেন
স্বাভাবিক বা একটু কমের দিকে রক্তচাপ পেলে অনেকে ভয়ে ওষুধ বন্ধ করে দেন। এটা ঠিক নয়। ওষুধ বা এর মাত্রা পরিবর্তন করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রক্তচাপ খুব বেশি কমে গেলে (৯০/৬০ মিমি পারদের কম) সে অবস্থাকে নিম্ন রক্তচাপ বলে। এ সময় মাথা ঝিমঝিম, মাথা ঘোরা বা মাথা হালকা বোধ হতে পারে। বসা বা শোয়া থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে ভারসাম্যহীন মনে হতে পারে। এ রকম অবস্থা হলে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের (এনসিডিসি) তথ্যমতে, অসংক্রামক রোগে বিশ্বে ৭১ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ৬৭ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া দেশে প্রতি পাঁচ জনে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এ অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সবাইকে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের পাশাপাশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি কান্ট্রি প্রোফাইল ২০১৮ অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশের পেছনে দায়ী নানা অসংক্রামক রোগ। দিন দিন এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপ খুব সাধারণ রোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এনসিডি রিস্ক ফ্যাক্টর সার্ভে (স্টেপস ২০১৮) অনুসারে, দেশে প্রতি পাঁচ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন (২১%) উচ্চ রক্তচাপে (সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার ১৪০ মিমি মার্কারি) আক্রান্ত। এর বাইরে এখনো বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের রক্তচাপ জানেন না। হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, পক্ষাঘাত, অন্ধত্বসহ নানাবিধ জটিল অসুখের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান।
