পানিবাহিত বিভিন্ন সংক্রামক রোগসহ নানা কারণে বন্যাপীড়িত এলাকায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে শিশুরা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার বেশকিছু জায়গায় বন্যার পানি কমতে শুরু করার পর সেখানে রোগব্যাধি বাড়ছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ফুড পয়জনিং, হেপাটাইটিস এবং খোসপাঁচড়া, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, প্যারনাইকিয়া ও স্ক্যাবিস জাতীয় নানা চর্মরোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ গাদাগাদি করে থাকার কারণে অনেকে শ্বাসনালির প্রদাহ, ফ্লু ও হাঁপানিতে আক্রান্ত হচ্ছে। করোনার ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে বন্যার্ত মানুষের গাদাগাদি অবস্থানে এ-সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিকিৎসাব্যবস্থা জোরদার করা না গেলে দেশের বন্যাকবলিত প্রতিটি জেলাতেই ভয়াবহ স্বাস্থ্যবিপর্যয় ঘটতে পারে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুযোগ না থাকায় বাড়তে পারে করোনা। এ সময় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকার সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই সেখানে জলাবদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্যসমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। দুধসহ অন্যান্য শিশুখাদ্যের সংকটে শিশুর মারাত্মক পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেবে। মায়ের অসুস্থতা, ত্রাণের জন্য ছোটাছুটি এবং পুরুষহীন পরিবারের নারীদের ঘর-বাড়ি পুনর্বাসনের ব্যস্ততায় শিশুর নিয়মিত পরিচর্যা ব্যাহত হবে। এতেও নবজাতকসহ নানা বয়েসি শিশুর স্বাস্থ্যবিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
অনেকেই নদীর আশপাশে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করে। মানুষের এ পয়োবর্জ্য এবং ওই এলাকার বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা মিলে জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে পড়ে। লোকজন তখন যদি এসব জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধ না করে পান করে, খাবারের কাজে ব্যবহার কিংবা থালাবাসন ধোয়া, কাপড় কাচা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করে, তখন ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগবালাই হতে পারে। দেশের সব জায়গায় পানিবাহিত রোগ একসঙ্গে ছড়ায় না। একই সঙ্গে সব মানুষ রোগে আক্রান্তও হয় না। ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু, তার শরীরে কতগুলো জীবাণু প্রবেশ করল এবং সে কী ধরনের পরিবেশে থাকে, রোগ হওয়ার হার এসবের ওপর নির্ভর করে। শরীর যদি এ তিনটির ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারে, তখন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত রোগ। খাবারের মাধ্যমে এ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। মূলত বন্যাকালীন দূষিত পানি পান আর অপরিচ্ছন্নতার কারণেই রোগবালাই বেশি হয়।
এই সময়ে যে কটি চর্মরোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে ছত্রাকজনিত চর্মরোগ অন্যতম। এ সমস্যা এড়াতে হলে গায়ে ভেজা কাপড় না রাখা উচিত। এ সময়ে ছত্রাকজনিত দাদ, ছুলি ও ক্যানডিডিয়াসিস হতে পারে। এদের মধ্যে ছুলির কারণে ত্বক দেখতে সাদা হয়। তাই অনেকেই আবার একে শ্বেতী ভাবতেও শুরু করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্বেতীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তবে সাবধানতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা থেকে সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়। -সংগৃহীত ।
