*** জীবনের ২৭টি বছর ধরে বসবাস করে আসছেন প্রকৃতির সঙ্গে । জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করতে চান দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সফল নার্সারি ব্যবসায়ী সেকেন্দার বাদশা । তিনি এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় নার্সারির মালিক| মাত্র ৫ শতক জমি দিয়ে ১৯৯৫ সালে শুরু করেন নার্সারি, এখন প্রায় ১০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের নার্সারি| এনেছেন সংসারজীবনে সচ্ছলতা । এখন প্রতিদিন পাঁচ-ছয় জন শ্রমিক তার নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ।
*** সেকেন্দার বাদশা বলেন, ছোট থেকে তার প্রকৃতির প্রতি একটা টান ছিল । ইচ্ছা ছিল প্রকৃতির পাশপাশি থাকা যাবে এমন পেশার সঙ্গে যুক্ত হবেন| কিন্তু জীবিকার তাগিদে তা হয়ে ওঠেনি । সংসারজীবনে অন্য পেশায় যুক্ত হন| একসময় বিভিন্ন সমস্যার কারণে তার পেশা ছাড়তে হয় এবং বেকার হয়ে পড়েন । বেকার জীবনে আর্থিক সংকটে পরিবার নিয়ে কষ্টে কাটছিল তার জীবন । তিনি সিদ্ধান্ত নেন, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা যাবে এমন পেশায় যুক্ত হবেন । সেই লক্ষ্যে নিজের কোনো জমাজমি না থাকায় বাড়ির পাশে মাত্র ৫ শতক জমি লিজ নিয়ে গড়ে তোলেন ছোট একটি নার্সারি । বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা উত্পাদন ও বিক্রি শুরু করেন । চারার গুণমান ভালো হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে তার নার্সারির চারার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে । চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আস্তে আস্তে তার নার্সারির পরিধিও বাড়তে থাকে| নার্সারির চারা বিক্রির আয়ে এক ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন । উপজেলা পর্যায়ে চারা উত্পাদনে তিনি সেরা নার্সারি হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন একাধিকবার । বর্তমানে তার নার্সারিতে দেশি-বিদেশি ৪০ প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রয়েছে । চলতি মৌসুমে বিক্রির জন্য তার নার্সারিতে প্রায় ৩০ হাজার চারা প্রস্ত্তত রয়েছে| সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে তিনি প্রতি মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় করছেন । তার উত্পাদিত চারা উপজেলার বিভিন্ন স্হানসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয়| প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এলাকার অনেক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তিনি বিনা মূল্যে চারা প্রদান করেছেন । শুধু ব্যবসার জন্য নয়, প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা থেকে তিনি জীবনের ২৭টি বছর এই পেশায় আছেন ।
*** জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক মো. আনিছুর রহমান বলেন, সেকেন্দার বাদশার নার্সারিতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন গাছের চারা নিতে আসেন । অনেকেই তার নার্সারি দেখতে আসেন এবং নার্সারি ব্যবসার জন্য তার কাছে পরামর্শ নেন । তার নার্সারির অনেক কর্মচারী এখন নিজেরাই নার্সারি গড়ে তুলে সফল হয়েছেন । নার্সারি পেশায় তিনি এলাকার দৃষ্টান্ত ।
-সংগৃহীত ।
