মাথাব্যথা আসলে কী কী কারণে হয় এবং সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নির্দেশ করে কি না?
‘প্রকৃতপক্ষে মাথাব্যথার দুটি ধরন রয়েছে। একটি শুধুই মাথাব্যথাজনিত রোগ। যেমন: মাইগ্রেন, টেনশনটাইপ মাথাব্যথা, ক্লাস্টার হেডেক ইত্যাদি। আবার অনেক সময় মাথাব্যথা অন্য কোনো রোগের নির্দেশক হিসেবেও কাজ করে ৷ চোখ, দাঁত, সাইনাস ইত্যাদির সমস্যায় মাথাব্যথা হয়। মস্তিষ্কের রোগ, টিউমার বা অতীতের তীব্র আঘাতের কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। তাই কেউ মাথাব্যথার অভিযোগ নিয়ে এলেই চিকিৎসক আগে তা কোন ধরনের মাথাব্যথা, তা নিরূপণের চেষ্টা করেন। মাইগ্রেনও প্রাইমারি মাথাব্যথা।’ এটি মারাত্মক বা প্রাণঘাতী কোনো রোগ নয়, কিন্তু এতে যাঁরা ভোগেন, তাঁরা খুবই কষ্ট পান।
‘মাইগ্রেনের কিছু ট্রিগার থাকে, যার ফলে মাথাব্যথা শুরু হয়৷ এগুলো বিভিন্নজনের জন্য বিভিন্ন রকম হতে পারে। অতিরিক্ত স্ট্রেস, ঘুম ও খাওয়ার অনিয়ম, উচ্চ শব্দ, অতিরিক্ত আলো, টানা পরিশ্রম, দীর্ঘ সময় ধরে মুঠোফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার এমনকি কোনো কোনো খাবার ও পানীয়ের প্রভাবে মাইগ্রেনের অ্যাটাক শুরু হতে পারে। সে সময় রোগীর মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমি বা বমি ভাব, শব্দ ও আলোক সংবেদনশীলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। তীব্র মাথাব্যথা শুরু হওয়ার আগে থেকেই রোগী বুঝতে পারেন অ্যাটাক হবে। অনেক সময় চোখে ঝাপসা বা আলোর ঝলক দেখা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি ঘটে। মাইগ্রেন ডায়াগনোসিস হলে ট্রিগারগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি জীবনযাপনে পরিবর্তন আনলে মাইগ্রেনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। স্বস্তির কথা হলো, এই রোগটি যতই কষ্টদায়ক হোক না কেন, এতে বড় কোনো দৈহিক ক্ষতি হয় না।
মাইগ্রেন ছাড়া অন্য কোনো কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে কি না, তা কীভাবে বোঝা যাবে?
‘মাইগ্রেনের ব্যথার ধরন দেখে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা চেনা যায়। তবে বেশি বা কম বয়স্ক রোগী হলে, অতিরিক্ত ও টানা বহুদিন মাথাব্যথা হলে তখন সাবধানে রোগ নির্ণয় করার পদক্ষেপ নেন চিকিৎসকেরা। ফান্ডোস্কপি দিয়ে মস্তিষ্কের প্রেশার মাপার মতো পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও রোগীর ইতিহাস ও শারীরিক লক্ষণের রেকর্ড রাখা হয় এ ক্ষেত্রে৷ সন্দেহ থাকলে বিশেষ ক্ষেত্রে এমআরআই, সিটি স্ক্যান ইত্যাদিসহ রক্ত পরীক্ষা, মস্তিষ্কে ইনফেকশন আছে কি না তা দেখা ইত্যাদি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এভাবে সঠিক ডায়াগনোসিস করে সেকেন্ডারি মাথাব্যথার সঠিক ও সময়োপযোগী চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।’
মাইগ্রেনের ওষুধ গর্ভাবস্থায় সেবন করা যাবে কি না ?
‘গর্ভবতী হওয়ার প্রথম দিকে খুবই সাবধানে ওষুধ খেতে হয় এবং সব ওষুধ গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে না।’
মাথাব্যথা হলে ঘুমের ওষুধ খাওয়া যাবে কি না ?
‘শুধু ঘুমের ওষুধে এতে কোনো লাভ হবে না। মাইগ্রেনের কোনো কোনো ওষুধে ঘুম আসে। তবে সেগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে সেবন করতে হবে।’
মাইগ্রেনের ব্যথা একেবারে সেরে যায় না। তবে জীবনযাপনে অনিয়ম এড়ালে, সঠিক ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিলে একজন মাইগ্রেন–রোগী স্বাভাবিক ও কোয়ালিটি লাইফ কাটাতে পারেন । তবে এ ক্ষেত্রে স্ট্রেস এড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। রাত জাগার অভ্যাস দূর করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় বর্জন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ব্যায়াম ইত্যাদির সমন্বয়ে উপযুক্ত লাইফস্টাইল ও সঠিক চিকিৎসা—এই সবকিছু মিলিয়েই মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
