রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হয় ? ফুটপাত না থাকলে ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে হয় । এটাই রাস্তায় চলার সঠিক নিয়ম । কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জানে না বলে বাম পাশ দিয়ে হাঁটে ।
আমাদের দেশে গাড়িগুলো সাধারণত রাস্তার বাম দিক দিয়ে চলে, তাই ডানপাশ দিয়ে হাঁটা জরুরি । পথচারী যদি বাম পাশ দিয়ে চলেন, তাহলে পিছন থেকে আগত গাড়িগুলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আঘাত করতে পারে । ডান পাশ দিয়ে হাঁটলে সামনের গাড়িগুলো দেখে নির্বিঘ্নে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় । এক্ষেত্রে পথচারীকে পিছন থেকে কোনো গাড়ি আঘাত করার সম্ভাবনা থাকে না । এই পথ চলার নিয়ম না জানার কারণে প্রতি বছর অনেকেই দুর্ঘটনায় পড়েন । এই পথ চলার নিয়ম প্রাইমারি স্কুল থেকে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন । সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর জন্য আমরা অনেকাংশেই দায়ী করে থাকি গাড়ি-চালকদের ।
কিন্তু শুধু চালক নয়, দায়ী অসচেতন নাগরিকও । সড়কে চলাচলের জন্য প্রত্যেকের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক । এই নিয়মগুলো না মানার ফলেই অনেক সময় পথচারীকে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয় । সড়কে চলার সময় সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চললে অনেকাংশেই দুর্ঘটনা রোধ করা যায় । ট্রাফিক সাইন ও ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে চালক ও পথচারীর জন্য জানা খুব প্রয়োজন । ট্রাফিক সিগন্যাল দু ধরনের: বাতির সাহাঘ্যে সংক্রিয়ভাবে আর হাতের সাহাঘ্যে ট্রাফিক পুলিশ দ্বারা| প্রথমেই আমাদের দেশের প্রচলিত ট্রাফিক সাইন সম্পর্কে ধারনা থাকা দরকার| অর্থাত্ কোন সাইনটির কী ‘অর্থ’, কোথায় কোন সাইনটি থাকলে তা রাস্তা চলাচলের ক্ষেত্রে কী বোঝায়, ইত্যাদি| আমাদের দেশের বেশির ভাগ চালকের কোথায় ওভারটেক করা যাবে এবং কোথায় যাবে না সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই ।
রাস্তার মাঝে সাধারণত চার ধরনের ডিভাইডার লেন দেখা যায়—
১. সাদা কিন্তু মাঝে মাঝে কাটা লেন,
২. একটানা সাদা রেখার লেন,
৩. একটানা ডাবল (সাদা/হলুদ) রেখার লেন,
৪. একটানা হলুদ রেখার পাশে কাটা হলুদ রেখার লেন ।
এই চার ধরনের লেনের অর্থ চার রকম । একজন ড্রাইভার যখন গাড়ি চালাবেন, তখন তাঁর অবশ্যই এই চার ধরনের লেনের অর্থ জানা থাকা উচিত ।
চারটি সাইন,
একটি হলো—রাস্তার মাঝখানে ফাঁকা ফাঁকা সাদা দাগ । এখানে একজন চালক ইচ্ছা করলে সুবিধামতো সময়ে ওভারটেক করতে পারবে । এ ধরনের সাইন সাধারণত সোজা রাস্তায় দেখা যায় ।
দ্বিতীয়টি হলো—রাস্তার মাঝখান দিয়ে সাদা দাগ যা লম্বালম্বিভাবে গিয়েছে । এটাকে বলা হয় ওভারটেকিং নিষিদ্ধ সাইন । এখানে কোনো অবস্থাতেই ওভারটেক করা যাবে না । এধরনের সাইন সাধারণত রাস্তার টার্নিং পয়েন্টে, কোনো ব্রিজের আগে বা বাজার এলাকায়ই দেখা যায় ।
তৃতীয়টি হলো—ডাবল হলুদ রেখার একটানা ডিভাইডার লেন; এর মানে হচ্ছে এই রাস্তায় কখনোই ইউটার্ন বা ওভারটেক করা যাবে না। লেন পরিবর্তন করা যাবে না ।
চতুর্থটি হলো—কখনো কখনো রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় এমন ডিভাইডার লেন দেখতে পাওয়া যায় যার একটা দাগ একটানা হলুদ রঙের । তার পাশেই আরেকটা হলুদ রেখা কিন্তু কাটা কাটা ।
এই বিশেষ ধরনের ডিভাইডার লেনের অর্থ ভিন্ন । যে পাশে একটানা হলুদ রেখা সে পাশের গাড়িগুলোর জন্য এই রকম ডিভাইডারযুক্ত রাস্তায় লেন পরিবর্তন এবং ওভারটেক ও ইউটার্ন নিষেধ । কিন্তু যে পাশে কাটা কাটা হলুদ রেখা, সে পাশের গাড়িগুলো চাইলে দরকার অনুযায়ী লেন পরিবর্তন এবং ওভারটেক করতে পারবে। হাইওয়েতে চলার সময় এ চারটি সাইন জানা খুবই জরুরি । ভাবতে অবাক লাগে, অনেক শিক্ষিত লোকও পথ চলার নিয়মটা জানেন না| জেব্রা ক্রসিং না থাকলে সামনে-পেছনে, ডানে-বাঁয়ে দেখে পার হোন| লাল বাতি মানে থামুন, হলুদ বাতিতে তৈরি হোন, সবুজে সামনে চলতে শুরু করতে হবে । রাস্তা পারাপার হওয়ার নিয়ম হলো প্রথমে ডানে তাকাতে হবে, তারপর বামে এবং সর্বশেষ ডানে তাকিয়ে রাস্তা পার হতে হবে । রাস্তা পার হতে হলে ডানে তাকাতে হবে; কারণ ডান দিকের গাড়ি প্রথমে আঘাত করবে । এরপর বামে তাকাতে হবে, কারণ উলটো দিক থেকে যে কোনো সময় গাড়ি আসতে পারে । সর্বশেষ ডানে তাকাতে হবে কারণ এই সময়ের মধ্যে যে কোনো গাড়ি চলে আসতে পারে । রাস্তায় চলার সময় যে বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে—রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ি দেখা । ফোনে কথা বলা যাবে না । জেব্রাক্রসিং ও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করা জরুরি ।
জেব্রাক্রসিং না থাকলে সামনে-পেছনে, ডানে-বাঁয়ে দেখা । রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণের লাইটের সংকেত দেখে নিতে হবে । পাবলিক বাসে ওঠানামার সময় সতর্ক থাকতে হবে । আমাদের দেশে গাড়িগুলো সাধারণত রাস্তার বাম দিক দিয়ে চলে, তাই ডানপাশ দিয়ে হাঁটা নিরাপদ । রাস্তায় হাঁটার নিয়ম ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান সবার কাছে পৌঁছাতে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিকসংক্রান্ত নিয়ম-কানুন সংযোজন করা জরুরি ।
-সংগৃহীত ।
