ভাগ্য উন্নয়নের আশায় দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেখানকার ক্যাম্পে আটকা পড়া অনেক ভুক্তভোগী মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের ফেরত আনতে ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছেন। এনজিও কর্মকর্তারা বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে অবহিত করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থা ভুক্তভোগীদের ফেরত আনা তো দূরের কথা, কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না। আবার অনেক এনজিও কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের দেশে ফেরত আনতে সহায়তা করায় উল্টো তাদের পাচার মামলার আসামি করছে পুলিশ। পাচার চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ দুর্বল চার্জশীট দেয়ায়, আদালতে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণাদি হাজির করতে না পারায় চক্রের সদস্যরা সহজেই জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে।
‘রাইটস যশোর’ এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, বিভিন্ন প্রলোভনে পড়ে যারা পাচারের শিকার হয়, তারা মূল পাচারকারীকে চিনে না। ক্যারিয়ার ওভারসিজ নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশে লোক পাঠানো নিয়ে অনেক অনিয়ম করে। অনৈতিক লেনদেন করে। বায়রা এদের শেল্টার দেয়। আমরা (এনজিও) কিছু বলতে গেলে বায়রা থামিয়ে দেয়। পাচারের শিকার ভুক্তভোগীকে আনতে গিয়ে উল্টো মামলা খেতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। বর্তমানে দুবাইয়ে দুজন এবং কিরগিজস্তানে দুজন মোট চার ব্যক্তি পাচার হয়ে সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা ও তাদের স্বজনরা আমাকে অনুরোধ করছে তাদের দেশে ফেরত আনতে। তাদের ফেরত আনতে দূতাবাস, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও পুলিশের আইজি বরাবর আবেদন করেছি। কিন্তু কোন সদুত্তর পাইনি। দেড় লাখ টাকা হলে দুবাই থেকে দুজনকে ফেরত আনা সম্ভব, তাও অবৈধভাবে। তাহলে দূতাবাসকে জানিয়ে কি লাভ হলো? মোবারক নামের এক দালালের মারফত এরা সেদেশে গিয়েছে। মোবারকের পাসপোর্ট আছে, তার বাড়ি দিনাজপুর। অথচ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।
পাচারের শিকার এক ভুক্তভোগীকে দেশে ফেরত আনে। এক্ষেত্রে দিনাজপুরের একটি ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার তাদের সহায়তা করে। কিন্তু কদিন পর সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ওই মহিলা মেম্বারকে পাচারের মামলার আসামি করে। এতে ভয় পেয়ে যান ওই মেম্বার। ঘটনাটি তুলে ধরে ইশরাত শামীম বলেন, পুলিশের ভূমিকা এমন হলে কেউ ভুক্তভোগীকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসবে না। পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারলে অনেক ভুক্তভোগী রক্ষা পাবে। তবে ভুক্তভোগীকে উল্টো ব্লেম দিলে, মানসিক নির্যাতন করলে তা চরম অমানবিক হবে। তিনি বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সি আবার ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করে। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে এমন অনেকে পাচারের শিকার হয়। কিন্তু আমাদের টপ লেভেলে যেতে হবে। আরেকটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক শিশুকে পাঁচ বছর বয়সে ভারতে বিক্রি করে দেয় পাচারকারী চক্র। পরবর্তীতে ১৭ বছর বয়সে তাকে দেশে ফেরত আনা হয়। আমাদের দেশে এমন অনেক শিশু নিখোঁজ হয়। থানায় জিডি/মামলাও হয়। কিন্তু উদ্ধার হয় কম। যেসব এলাকায় মানবপাচার বেশি হয়, সেখানে আইশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর থাকা উচিত।
ব্লাস্ট কর্মকর্তা বরকত বলেন, পাচারের শিকার হয়েও অনেক ভুক্তভোগী পাচারকারীর সঙ্গে আপোস করে ফেলে। কিন্তু আইনে তাকে সহায়তা দেয়ার বিধান রয়েছে। তাকে আইনী সহায়তা যদি নিশ্চিত করা যায় এবং তাকে যদি সচেতন করা যায় যে, আইন ও আমরা তোমার সঙ্গে রয়েছে। তোমার কোন ভয় নেই। তাহলে কোন ভুক্তভোগীই পাচার চক্রের সঙ্গে আর আপোস করবে না। -সংগৃহীত ।
