বর্তমান সময়ে আলোচিত একটি বিষয় লিভার ডিটক্স। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে হাটবাজার—আজকাল লিভার ডিটক্স বা যকৃৎ পরিষ্কার করে এমন পণ্যের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। লিভার ডিটক্সিফিকেশনে এসব পণ্য কি আসলেই জরুরি?
লিভার যেভাবে কাজ করে
লিভারের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ (যেমন ওষুধ, অ্যালকোহল এবং পরিবেশগত দূষণকারী উপাদান) ছেঁকে বের করে দেওয়া।
লিভারের এই কাজের জন্য বাইরে থেকে কোনো বিশেষ ডিটক্স ডায়েট বা সাপ্লিমেন্ট খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। কারণ, লিভার নিজেই একটি অসাধারণ ডিটক্সিফিকেশন সিস্টেম বা শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয় পদার্থ অপসারণ করার প্রক্রিয়া।
ডিটক্স পণ্য কী করেঃ
আদিকাল থেকেই লিভার ভালো রাখতে নানা রকম প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন খাবার ও মসলা ব্যবহার করা হয়। যেমন হলুদের রস বা নির্যাসে কারকিউমিন নামক একধরনের উপাদান থাকে যা লিভারের প্রদাহ ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
তবে তা সামান্য পরিমাণ প্রয়োজন হয়। সাপ্লিমেন্ট হিসেবে অতিরিক্ত হলুদ গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় যেমন বমি ভাব, বমি, পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা এমনকি কিডনিতে পাথর এবং লিভারেরও ক্ষতি হতে পারে।
তাই ডিটক্স হিসেবে হলুদ গ্রহণ করলেও খুব অল্প পরিমাণ মাঝেমধ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।
উদ্ভিদ মিল্ক থিসল অনেক সময় লিভারের প্রদাহ কমায়। আদা, রসুন, গ্রিন টিতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় এগুলো লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। আবার বিটরুটে প্রচুর আয়রন ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় এটি রক্তশূন্যতা কমায় এবং ত্বক ভালো রাখতে ভালো কাজ করে। বিটরুটের আঁশ হজমশক্তি বাড়ায় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হতে সাহায্য করে। এর মধ্যে বিটালেইন নামক একধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে যা লিভারের ডিটক্সিফিকেশনের জন্য এনজাইমকে উদ্দীপিত করে, ফলে লিভার ভালো থাকে।
লিভার সুস্থ রাখতে কী করা উচিত?
লিভার ভালো রাখতে জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। লিভারের কার্যক্ষমতা কমার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি জমা, যা শরীরের অতিরিক্ত ওজনের কারণে হয়।
লিভার ডিটক্সের নামে বিভিন্ন জুস, সাপ্লিমেন্ট বা বিশেষ ডায়েট অনুসরণ করার চেয়ে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা অনেক বেশি কার্যকর।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ প্রচুর ফল, সবজি, শস্য ও স্বাস্থ্যকর চর্বি ওেবং যেসব খাবরে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ওমেগা-৩ আছে, সেগুলো নিয়মিত খাওয়া দরকার। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি ও অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
অ্যালকোহল পরিহারঃ অতিরিক্ত অ্যালকোহল লিভারের জন্য ক্ষতিকর। তাই অ্যালকোহল পরিহার করা ভালো।
নিয়মিত ব্যায়ামঃ ব্যায়াম লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম শরীরকে ভালো রাখে।
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ স্থূলতা লিভারের ক্ষতি করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লিভার সুস্থ রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। যদি লিভারের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো উদ্বেগ থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
-সংগৃহীত ।
