08/12/2025

এবার কিডনির রোগের মূল কারণ খুঁজে পেলেন গবেষকরা


শুধু কি পানি কম খাওয়ার কারণে কিডনির রোগ  হয়, নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ রয়েছে, যে কিনা কিডনি রোগের ওপর দাপট দেখিয়ে চলে? এ বিষয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন, কিডনি রোগের ওপর এক বিশেষ ধরনের স্নেহপদার্থ দাপট দেখায়। সেটি শরীরের শক্তি উৎপাদনকারী কোষ মাইটোকনড্রিয়াকে ফালা ফালা করে দেয়। এর ফলে শক্তি তৈরির প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। কোষকে শক্তিহীন করে দিয়ে সেটি সরাসরি আঘাত হানে কিডনির ওপরে। একে একে নষ্ট করতে থাকে কিডনির সুস্থ ও সবল কোষগুলোকে। ফলে যে রোগটি দেখা দেয়, তার নাম ‘অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি’। মূলত এটিই হলো সূত্রপাত। কিডনির কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে শেষে কিডনি বিকল হওয়া শুরু হয়।


হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সঙ্গে এ গবেষণায় রয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ ইউটা।  সেখানকার গবেষকরা জানিয়েছেন, সেই স্নেহপদার্থটির নাম ‘সেরামাইড’। এটি সবার শরীরেই থাকে। তবে বাইরের খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার কিংবা জাঙ্কফুড বেশি খেলে এর মাত্রা বেড়ে যায়। এই ‘সেরামাইড’ যদি অধিক পরিমাণে রক্তে মিশে যায়, তাহলে সেটি মাইটোকনড্রিয়ার ওপর হামলা করে। আর মাইটোকনড্রিয়া হলো আপনার শরীরের শক্তি তৈরির ঘর। সেখানে কোষের জন্য শক্তি (এটিপি) তৈরি হয়। কোষের জন্ম-মৃত্যু, ক্যালশিয়াম সঞ্চয় করে রাখা, সংকেত আদান-প্রদানেও এর বড় ভূমিকা আছে। মাইটোকনড্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোষের শক্তি তৈরির প্রক্রিয়াটিই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কোষগুলোর সুরক্ষাকবচ নষ্ট হতে থাকে। সেই সুযোগে সেরামাইড আক্রমণ করে কিডনির কোষগুলোকে।


গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, সেরামাইডের আধিক্য ঘটলে কিডনির সব মাইটোকনড্রিয়া কোষগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে কিডনির সুস্থ কোষগুলো অকেজো হয়ে যেতে থাকে। 


গবেষকরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেরামাইড বেশি হলে কিডনি ফেলিওরের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। আবার সেরামাইডের মাত্রা কমিয়ে ফেললেই কিডনি সুস্থ হচ্ছে ধীরে ধীরে। সেরামাইডের পরিমাণ যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলেই কিডনির অসুখ হওয়ার ঝুঁকি পুরোপুরি কমে যাবে বলেই দাবি করেছেন গবেষকরা। 


সে ক্ষেত্রে সেরামাইডের মাত্রা কমাতে হলে বিশেষ কোনো ওষুধ খেতে হবে, তা না হলে ইনজেকশন নিতে হবে। কী উপায়ে সেরামাইডকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, সে চেষ্টাই করছেন গবেষকরা। মানুষের ওপর পরীক্ষা করেও দেখা হচ্ছে। 


গবেষকরা ‘সেরামাইড কন্ট্রোল থেরাপি’ করে দেখছেন সেটি কতটা কার্যকরী হয়। যত জনের ওপর এ থেরাপি করা হয়েছে, তাদের কিডনির রোগ নির্মূল হওয়ার পথে বলেও দাবি করা হয়েছে। থেরাপিটি করার পর কিছু বদল দেখা গেছে রোগীর শরীরে— প্রথমত  কিডনির ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো মেরামত হয়েছে। দ্বিতীয়ত কিডনির ক্রনিক রোগে যারা আক্রান্ত, তাদের ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমেছে। তৃতীয়ত শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে গেছে।


তবে গবেষণাটি আরও বৃহত্তর পর্যায়ে করা উচিত বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা। রোগীর শারীরিক অবস্থা বিচার করেই থেরাপি করা হবে। সবার ক্ষেত্রে যদি একই রকম কার্যকরী ফল দেয়, তাহলেই থেরাপিটি কিডনির অসুখ সারাতে প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

-সংগৃহীত ।



03/12/2025

শীতে চর্ম রোগ থেকে পরিত্রাণের উপায়


শীত আগত। লক্ষ কোটি মানুষ এ সময় বিভিন্ন ত্বকের সমস্যায় ও রোগে ভোগেন। ত্বক বা চামড়া মানব দেহের সর্ববৃহৎ অঙ্গ। সুতরাং এর সমস্যা ও রোগও বেশি। আজ আমরা আলোচনা করবো-

শীতকালে কি কি ধরনের চর্ম সমস্যা ও রোগ হয় এবং এগুলো থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

শীতে সাধারণত কি ধরনের ত্বকের সমস্যা হয়?

শীতে সাধারণত যে ধরনের ত্বকের সমস্যা হয় সে গুলো হলোঃ-

=> ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।

=> কোনো কারণ ছাড়াই চুলকানি।

=> ঠোঁট পা শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়া এবং ইনফেকশন হওয়া।

=> খুশকি বেশি হওয়া।

=> কিছু চর্ম রোগ বেশি মাত্রায় দেখা দেয়া যেমন স্ক্যাবিস, এলার্জি ইত্যাদি।

=> পুরাতন জামা কাপড় উলের পোশাক, বিভিন্ন ক্রিম, লোশন, পমেড ইত্যাদি ব্যবহারে চুলকানিও ত্বকের প্রদাহ হওয়া।

=> এ ছাড়া বিভিন্ন ক্রনিক ডিজিজ যেমন ডায়াবেটিস, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, থাইরয়েডের রোগে বেশি মাত্রায় ত্বক শুষ্ক হওয়া ও চুলকানি হওয়া।


শীতে ত্বকে সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?

সাধারণ কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে শীতে ত্বকের সুরক্ষা সম্ভব। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন এলার্জি এবং ক্রনিক ডিজিজ যেমন ডায়াবেটিস, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, থাইরয়েডের রোগে ভুগছেন তাদের বিশেষভাবে  সতর্ক থাকতে হবে এবং ত্বকের যত্ন নিতে হবে।

=> অতিরিক্ত শীতে প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়া ।

=> বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়া ।

=> ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ।

=> অলিভ অয়েল, নারিকেল তৈল, ভেসলিন, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করা।

=> পুরাতন ও উলেন কাপড় ব্যবহারের আগে ধুয়ে নেয়া এবং যাদের উলেন কাপড়ে এলার্জি আছে তারা ভেতরে সুতির কাপড় পরিধান করা।

=> খুশকির জন্য Ketoconayole, Zinc Pyrithione, Ciclopirox যুক্ত শ্যাম্পু সপ্তাহে ২/৩ দিন ব্যবহার করা

=> স্কাবিস হলে একই কাপড় চোপড়, চাদর, গামছা, তোয়ালে, লেপ, কম্বল ইত্যাদি ব্যবহার না করা। দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক পরিবারের সকল সদস্যদের চিকিৎসা নেয়া।

=> ঠোঁট ও পায়ের চামড়া শুষ্ক হয়ে ফেটে গেলে, ব্যথা ও ইনফেকশন হলে বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীরা দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

=> যাদের সাধারণ নিয়মকানুন মানার পর ত্বকের সমস্যা যাচ্ছে না, তারা দ্রুত চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

-সংগৃহীত ।

02/12/2025

শিশুদের হাতে, পায়ে ও মুখে ফোস্কা? কারন ও প্রতিকার



মুখের ভিতেরে জ্বালাপোড়া-ঘা, খাবারে অনীহা, হাতে পায়ে পানিসহ ফোস্কা, জ্বর নিয়ে অনেক বাচ্চাই ডাক্তারের কাছে আসছেন। এদের বেশীর ভাগই বহুল পরিচিত চিকেন পক্স, স্কেবিস, হাম, খোসপাচড়ার মত রোগে ভুগছে না। এটি একটি এন্টেরোভাইরাস ঘটিত রোগ, যাকে বলা হয় হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ। যা ৩ থেকে ৭ বছর বয়সের বাচ্চাদেরই বেশী আক্রান্ত করছে।

লক্ষণ কি হয়:

  1.  বাচ্চা দুর্বল হয়ে যায়, বিরক্ত ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
  2.  গায়ে জ্বর থাকে।
  3.  মুখে ভিতরে ব্যথা, ঘা ও লালচে রং ধারন করে।
  4.  হাতে, পায়ের তলায়, পিঠে, পাছায় পানিসহ দানা দেখা যায়। এরা না চুলকালেও এলাকাভেদে এদের রং লাল, সাদা, ধুসর ইত্যাদি রংয়ের হয়।
  5.  খাবারের রুচি চলে যায়।

কি কারনে এটি হয়:

=> সাধারণত কক্সাকি ভাইরাস ১৬ দিয়েই এটি হয়। এটি নন পোলিও এন্টেরো ভাইরাস গ্রুপের একটি ভাইরাস। তবে অন্যান্য এন্টেরো ভাইরাসও এই হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ করতে পারে।

=> জীবানু বহনকারীর মুখ থেকেই বেশীরভাগ বাচ্চা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসলে তার যে সব বডি ফ্লুইড অন্যকে সংক্রমিত করে-
  • নাক ও গলার রস
  • মুখের লালা
  • চামড়ার ঘায়ের কস
  • পায়খানা
  • হাঁচি কাশির ফলে বাতাসে ভেসে থাকা ড্রপলেট।

কাদের বেশী হয়:

যেখানে অনেক বাচ্চা একসাথে থাকে। ছোট বাচ্চারা ঘন ঘন ডায়াপার বদলায়, একই ওয়াস রুম ব্যাবহার করে। বাচ্চারা হাত মুখে দেয়, একই খেলনা কয়েকজন মুখে দেয়।
সংক্রমিত হওয়ার প্রথম সপ্তাহেই অন্যকে বেশী সংক্রমিত করতে পারে। তবে সমস্যা চলে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেও বাচ্চার শরীরে ভাইরাস থেকে যেতে পারে। তাই সে তখনও অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে।
বড়রা কোন লক্ষন ছাড়াই অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে।
আমাদের দেশে বর্ষার পর পরই এটা বেশী ছড়ায়। তবে অন্য সময়েও এটা হতে পারে।

পশু থেকে মানুষে ছড়ায় না:

পশুদের যে মুখ ও খুড়া রোগ হয় তা থেকে এটি আলাদা। অর্থাৎ পশু থেকে এই রোগ মানুষের কাছে আসে না আবার মানুষের হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ মানুষ থেকে পশুর কাছে যায় না। এরা ভিন্ন ভিন্ন রোগ।

ঝুঁকিপূর্ণ কখন:

বয়সটাই একটা বড় ঝুঁকি। ৫ থেকে ৭ বছরের কম বয়সিদেরই এটা বেশী হয়। আর যারা একই সাথে ডে কেয়ার, নার্সারীতে বা বাসায় অনেক বাচ্চা একসাথে থাকে তারই বেশী আক্রান্ত হয়। ধারনা করা হয় একটু বড় বাচ্চারা আর বড়রা একবার এক্সপোজ হওয়ার পর এন্টিবডি তৈরী করে ফেলে। তারপরও যাদের এন্টিবডি নাই তারা বড় হলেও আক্রান্তের তালিকায় আসতে পারে।

জটিলতা যা হতে পারে:

প্রথম এবং খারাপ জটিলতা হল শরীরের পানি কমে গিয়ে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। কারন এ সময়ে মুখ গলায় ঘায়ের কারনে বাচ্চা খেতে ও গিলতে পারে কম।
তাই যারা খেতে পারছে না, নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, প্রস্রাব কমে যাচ্ছে প্রয়োজনে তাদের শিরায় ফ্লুইড বা আইভি ফ্লুইড দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

জ্বর, ফোস্কা, মুখে ঘা কয়েক দিনেই সেরে যায় তরল খাবার বারবার খেলে আর প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধে। তবে যদি এটা ব্রেইনকে আক্রান্ত করে তবে ভাইরাল মেনিজাইটিস ও এনকেফালাইটিস করতে পারে। যা থেকে মৃত্যুও হতে পারে। যদিও এত জটিল অবস্থা হয়েছে এমন বাচ্চা অনেক কম পাওয়া যায়।

প্রতিরোধের উপায় কি: 

কিছু কিছু ভাল অভ্যাস হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ থেকে বাচ্চাকে সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।


হাত পরিস্কার: 

সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে খাবার তৈরি ও খাবার খাওয়ানোর আগে। বাচ্চার ডায়াপার পরিস্কার করার পর, হাঁচি-কাশি-নাক পরিস্কারের পর। সাবানের যোগান না থাকলে সেনিটাইজার দিয়ে হলেও হাত পরিস্কার রাখতে হবে।

পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা শিক্ষা দিতে হবে: 

কিভাবে হাত মুখ ধুতে হয়। কখন অবশ্যই ধুতে হয়। কোন ভাবেই কেন হাত, আঙ্গুল বা কোন খেলনা মুখে দিতে হয় না তা বলে বুঝাতে হবে।

কমন জায়গা ও ব্যবহার্য পরিস্কার রাখা: 

যেখানে অনেক মানুষ, বাচ্চা এক জায়গায় আসে, খেলে, খায় তা নিয়ম করে বার বার পরিস্কার করতে হবে। সাবান পানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। ফ্লোরটা ফ্লোর ক্লিনার দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। খেলনা, কলম, পেন্সিল, দরজার নব, লিফ্টের বাটন, টেবিল পরিস্কার রাখতে হবে প্রতি বেলায়।

সংক্রমিত রুগী থেকে দুরে থাকতে হবে: 

যেহেতু এটা ছোঁয়াচে রোগ তাই যার রোগটি আছে সে বাসায় আলাদা থাকবে যতদিন তার রোগ লক্ষণ থাকে, চামড়ার ঘা শুকিয়ে না যায়, মুখের ভিতরটা ভাল হয়ে না যায়।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:

  • উপরের রোগ লক্ষন থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে নিজে চিকিৎসা করে বা হাতুড়ের পরামর্শে তা বাড়িয়ে তুলবেন না।
  • বাচ্চার  বয়স ৬ মাসের কম হলে অবশ্যই চিকিৎকের পরামর্শে চিকিৎসা নিবেন।
  • মুখের ব্যথা বা ঘায়ের জন্য কম খেতে পারছে বা খেতে পারছে না।
  • কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে এমন রুগী।
  • ১০ দিনেও লক্ষণের উন্নতি হয়নি এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
-সংগৃহীত ।

16/11/2025

ডায়াবেটিস হলে কি শর্করা জাতীয় খাবার বন্ধ করা উচিত?



ডায়াবেটিসের প্রধান চিকিৎসা হলো শৃঙ্খলিত জীবনযাপন। শৃঙ্খলার একটি অন্যতম অংশ হচ্ছে ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস। কিন্তু বেশির ভাগ রোগী ডায়াবেটিক ডায়েট সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা পোষণ করেন।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে খাদ্যতালিকা থেকে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট একেবারে বাদ দিচ্ছেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। খাদ্যতালিকা থেকে শর্করা বাদ দিলে নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। শর্করা আমাদের শরীরের প্রধান জ্বালানি বা শক্তির উৎস। খাদ্যতালিকা থেকে শর্করা বাদ দিলে প্রথমেই সুষম খাদ্যের ভারসাম্য নষ্ট হয়।


শর্করা বাদ দিলে কী হতে পারেঃ

শর্করা বন্ধ করলে শরীর দ্রুত হারে চর্বি ভাঙতে শুরু করে। ফলে প্রচুর কিটো অ্যাসিড তৈরি হয় এবং রক্তের পিএইচ কমে যায়। ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যেতে পারেন। এ ছাড়া শর্করা না খেলে শরীর পেশি ভেঙে শক্তি উৎপন্ন করতে চেষ্টা করে। ফলে পেশি শুকিয়ে যেতে থাকে, অতিরিক্ত দুর্বলতা দেখা দেয় এবং স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়।

ডায়াবেটিস রোগীরা শর্করা একেবারেই না খেলে রক্তের শর্করা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। এতে মাথাব্যথা, শরীর কাঁপা, ক্লান্তি, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, কথা বলতে সমস্যা, খিঁচুনি, চেতনা হারানো, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

শর্করা বাদ দিলে শরীর থেকে পানি কমে পানিশূন্যতা দেখা দেবে। ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। ফলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, ত্বক শুষ্ক হয়ে দাগ পড়ে যায়। শর্করা কম খাওয়ায় শরীরে শক্তি কমে মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অল্পতেই বিরক্তি, সারাক্ষণ ঘুম ঘুম ভাব থেকে পড়াশোনা বা কাজে কম মনোযোগ, পড়া মুখস্থ না থাকা, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য, কখনো ডায়রিয়াসহ অনেক কিছু হতে থাকে।


করণীয়ঃ

ডায়েট বা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে শর্করা বাদ দেওয়ার দরকার নেই। বরং দরকার উপযুক্ত শর্করা খাবার বাছাই করা। জটিল শর্করা রক্তের সুগার চট করে বাড়ায় না। ডায়াবেটিসের রোগীর উচ্চ আঁশযুক্ত, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সসম্পন্ন খাবার বেছে নিতে হবে। সারা দিনের খাবারে ৪০ শতাংশের বেশি শর্করা রাখা যাবে না। শর্করার উৎস হিসেবে লাল চাল, লাল আটা, বার্লি আটা, রোল্ড ওটস, ডাল ও শাকসবজি বেছে নিতে হবে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে একবারে বেশি শর্করাজাতীয় খাবার না খেয়ে দুই-তিনবারে ভাগ করে খেতে হবে। স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম, দুধ, টক দই, স্যুপ, চিবিয়ে খেতে হয় এমন ফল, সালাদ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদ বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

-সংগৃহীত ।

12/11/2025

এসব পানীয় কি রাতে খাচ্ছেন?



রাতে এক গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুমানোর অভ্যাস অনেকের। কেউ আবার ঘুমের আগে কেবল পানিই খান। আদতে কোন ধরনের তরল গ্রহণ করা উচিত রাতে? কোনগুলোই–বা এড়িয়ে চলা উচিত সন্ধ্যা থেকে?

পানিঃ

রাতে ঘুমের পুরোটা সময় আমরা কোনো কাজ না করলেও দেহের ভেতর চলতে থাকে নানা ক্রিয়া–বিক্রিয়া। সেসব ক্রিয়া–বিক্রিয়ার জন্য পানি অপরিহার্য। তাই রাতে ঘুমের আগে এক গ্লাস পানি খাওয়া ভালো অভ্যাস।

তাতে সারা রাতে আপনার পানিশূন্য হয়ে পড়ার ঝুঁকিও কমে। তবে আপনি চাইলে পানির পরিবর্তে এমন পানীয়ও খেতে পারেন, যা পানির এই চাহিদা পূরণ করবে।


ডিটক্স পানিঃ

রাতে পানির পরিবর্তে আপনি ডিটক্স পানি খেতে পারেন অনায়াসেই। ডিটক্স পানি ঘুমের জন্য ভালো। এ ছাড়া এসব পানীয় দেহের বিপাক হার কিছুটা বাড়ায়। অর্থাৎ বাড়তি মেদ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে এসব পানীয়। ডিটক্স পানি ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এসব পানীয় ছাঁকা উচিত নয়। কুসুম গরম পানি দিয়ে তৈরি করতে পারেন ডিটক্স পানি।

রাতে যেসব উপকরণ দিয়ে ডিটক্স পানি তৈরি করতে পারেন—

=> আদা ও লেবু

=> দারুচিনি (সঙ্গে মধুও দেওয়া যেতে পারে)

=> হলুদ ও গোলমরিচ

=> শসা ও লেটুসপাতা

=> মেথি, জৈন ও গুয়ামৌরি (অ্যাসিডিটি কমাতে এই পানীয় দারুণ)

রাতে পানির পরিবর্তে আপনি ডিটক্স পানি খেতে পারেন অনায়াসেই 


দুধঃ

রাতে শোয়ার আগে দুধ খেলে ঘুম ভালো হবে কি না, ব্যাপারটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। তবে অনেকেই শোয়ার আগে দুধ খান। এটি তাঁদের ঘুমের জন্য মানসিক প্রস্তুতির একটা অংশ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু অনভ্যস্ত ব্যক্তির জন্য হঠাৎ রাতে দুধ খেতে শুরু করাটা অস্বস্তিকর হতে পারে।

কারও জন্য গরম দুধ ভালো, কারও জন্য ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করা দুধ ভালো। কেউ আবার স্বাভাবিক তাপমাত্রার দুধ খান। এ বিষয়টি ব্যক্তিভেদে আলাদা। দুধ খেলে পানির চাহিদা তো মিটবেই, মিলবে পুষ্টিও। তবে আপনি দুধ রাতে খাবেন নাকি দিনের অন্য কোনো সময়ে, ঠিক করে নিন আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের ভিত্তিতেই।


চিনি মেশানো পানীয়ঃ

চিনি মেশানো পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য কখনোই ভালো নয়। বিশেষত রাতে আপনি যদি এ ধরনের পানীয় খান, তাহলে এই বাড়তি ক্যালরি আপনি পোড়ানোর সুযোগও পাচ্ছেন না। তার ওপর রাতে চিনি মেশানো পানীয় খাওয়া হলে তাতে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে।

বাদামি চিনি, কৃত্রিম চিনি, মধু বা গুড় কোনোটিকেই চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই। অর্থাৎ কোমল পানীয়, সোডা, চিনি মেশানো ফলের রস বা শরবত—কোনো কিছুই খাওয়া উচিত নয় রাতে। রাতের পানির চাহিদা মেটাতে উপযোগী পানীয় নয় এসব।


চা, কফি ও চকলেট মেশানো পানীয়ঃ

বিকেলের পর চা, কফি কিংবা চকলেট মেশানো পানীয় না খাওয়াই ভালো। এসব পানীয়তে থাকা ক্যাফেইনের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এ ধরনের পানীয় খেলে রাতে প্রস্রাবও বেশি হতে পারে। তবে কিছু ভেষজ চা ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে। যেমন ক্যামোমিল চা, অশ্বগন্ধা চা প্রভৃতি খাওয়া যেতে পারে সন্ধ্যায়।


যেকোনো তরলের বেলায় খেয়াল রাখুনঃ

শোয়ার ঠিক আগমুহূর্তে পানি খেতে নেই। বরং শোয়ার অন্তত এক-দেড় ঘণ্টা আগে পানি খাওয়া উচিত। রাতের খাবার খাওয়ার এক-আধ ঘণ্টা পর পানি খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো।

রাতে খুব বেশি পরিমাণে পানি না খাওয়াই ভালো। তাতে ঘুমের মাঝে বারবার প্রস্রাবের চাপ হতে পারে। এসব নিয়ম অন্যান্য তরল খাবারের জন্যও প্রযোজ্য।

-সংগৃহীত ।

11/11/2025

ইনডোর প্ল্যান্টের যত উপকারিতা



যেসব গাছ ঘরে রাখলে বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় না, মূলত সেগুলো ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গাছগুলো কেবল ঘরের সৌন্দর্যই বাড়ায় না বরং স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।

আসুন দেখি ইনডোর প্ল্যান্ট আমাদের কীভাবে উপকার করে-

বিশুদ্ধ বাতাসের অন্যতম উৎসঃ

নাসার গবেষণায় দেখা গেছে, ইনডোর প্ল্যান্ট ক্ষতিকারক পদার্থ যেমন কার্বন মনোক্সাইড, ফর্মালডিহাইড, অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাইঅক্সাইডসহ আরও অনেক কিছু দূর করে। এগুলো মূলত মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অসুস্থতা ও অ্যালার্জির কারণ হিসেবে পরিচিত। ঘরে কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট যুক্ত করা হলে বাতাসের গুণমান বাড়বে এবং বাতাস আরও পরিষ্কার হবে।

মানসিক চাপ কমায়ঃ

সবুজ রং দেহ ও মনে প্রশান্তি আনে। চারপাশে গাছপালা এক ধরনের মানসিক শান্তি আনে। তাছাড়া মনের চাপ কমাতে, রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ইনডোর প্ল্যান্ট।

গৃহসজ্জায়ঃ

যদি গৃহের একঘেয়েমি সাজসজ্জা দূর করতে চান, সেক্ষেত্রে ইনডোর প্ল্যান্টের জুড়ি মেলা ভার। কারণ ইনডোর প্ল্যান্টের রং আর আকারে রয়েছে বৈচিত্র্য। বইয়ের শেলফের এক কোণায় ছোট ক্যাকটাস কিংবা ঘরের কোনো ছোট অংশ ফাঁকা লাগলে বড় সাইজের একটা পামগাছ ঘরের সৌন্দর্যই বদলে দেবে।

অর্থ সাশ্রয় করে যেভাবেঃ

গাছপালা আপনার অর্থের একটি ছোট অংশ বাঁচাতে পারে। সাজসজ্জার বাইরেও ব্যবহারিকতা আছে এমন প্রচুর উদ্ভিদ রয়েছে। যেমন -  রোদে পোড়া ও চুলের যত্নে ঘৃতকুমারী, রান্নার জন্য অরিগ্যানো, মশা তাড়ানোর জন্য সিট্রোনেলা, খাওয়ার জন্য টম্যাটো ইত্যাদি। এয়ার ফ্রেশনারের বদলে ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি বা পুদিনা লাগাতে পারেন।

10/11/2025

জানুন লিভার সুস্থ্য রাখতে করনীয়


বর্তমান সময়ে আলোচিত একটি বিষয় লিভার ডিটক্স। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে হাটবাজার—আজকাল লিভার ডিটক্স বা যকৃৎ পরিষ্কার করে এমন পণ্যের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। লিভার ডিটক্সিফিকেশনে এসব পণ্য কি আসলেই জরুরি?

লিভার যেভাবে কাজ করে

লিভারের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ (যেমন ওষুধ, অ্যালকোহল এবং পরিবেশগত দূষণকারী উপাদান) ছেঁকে বের করে দেওয়া।

লিভারের এই কাজের জন্য বাইরে থেকে কোনো বিশেষ ডিটক্স ডায়েট বা সাপ্লিমেন্ট খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। কারণ, লিভার নিজেই একটি অসাধারণ ডিটক্সিফিকেশন সিস্টেম বা শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয় পদার্থ অপসারণ করার প্রক্রিয়া।

ডিটক্স পণ্য কী করেঃ

আদিকাল থেকেই লিভার ভালো রাখতে নানা রকম প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন খাবার ও মসলা ব্যবহার করা হয়। যেমন হলুদের রস বা নির্যাসে কারকিউমিন নামক একধরনের উপাদান থাকে যা লিভারের প্রদাহ ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।

তবে তা সামান্য পরিমাণ প্রয়োজন হয়। সাপ্লিমেন্ট হিসেবে অতিরিক্ত হলুদ গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় যেমন বমি ভাব, বমি, পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা এমনকি কিডনিতে পাথর এবং লিভারেরও ক্ষতি হতে পারে।

তাই ডিটক্স হিসেবে হলুদ গ্রহণ করলেও খুব অল্প পরিমাণ মাঝেমধ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।

উদ্ভিদ মিল্ক থিসল অনেক সময় লিভারের প্রদাহ কমায়। আদা, রসুন, গ্রিন টিতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় এগুলো লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। আবার বিটরুটে প্রচুর আয়রন ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় এটি রক্তশূন্যতা কমায় এবং ত্বক ভালো রাখতে ভালো কাজ করে। বিটরুটের আঁশ হজমশক্তি বাড়ায় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হতে সাহায্য করে। এর মধ্যে বিটালেইন নামক একধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে যা লিভারের ডিটক্সিফিকেশনের জন্য এনজাইমকে উদ্দীপিত করে, ফলে লিভার ভালো থাকে।


লিভার সুস্থ রাখতে কী করা উচিত?

লিভার ভালো রাখতে জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। লিভারের কার্যক্ষমতা কমার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি জমা, যা শরীরের অতিরিক্ত ওজনের কারণে হয়।

লিভার ডিটক্সের নামে বিভিন্ন জুস, সাপ্লিমেন্ট বা বিশেষ ডায়েট অনুসরণ করার চেয়ে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা অনেক বেশি কার্যকর।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ প্রচুর ফল, সবজি, শস্য ও স্বাস্থ্যকর চর্বি ওেবং যেসব খাবরে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ওমেগা-৩ আছে, সেগুলো নিয়মিত খাওয়া দরকার। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি ও অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।

অ্যালকোহল পরিহারঃ অতিরিক্ত অ্যালকোহল লিভারের জন্য ক্ষতিকর। তাই অ্যালকোহল পরিহার করা ভালো।

নিয়মিত ব্যায়ামঃ ব্যায়াম লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম শরীরকে ভালো রাখে।

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ স্থূলতা লিভারের ক্ষতি করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিভার সুস্থ রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। যদি লিভারের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো উদ্বেগ থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

-সংগৃহীত ।

সিজার পরবর্তী সময়ে নরমাল ডেলিভারি, কখন সম্ভব?

আমাদের দেশে অনেকেরই ধারণা একবার সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি হলে পরবর্তী প্রতিটি প্রেগনেন্সিতে সিজার করার দরকার হয়। ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব অবস...